যশোরের রেলগেট এলাকার সাদী হত্যার নেপথ্যে মূলত রেল বাজারের দখলদারিত্ব, চাদাবাজি ও মুজিব সড়কের ভিআইপি কাপড় মার্কেট নিয়ন্ত্রণের বিরোধ। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ আধিপত্য ও অর্থনৈতিক হিস্যা নিয়ে টানাপোড়েনের জের ধরেই সাদী খুন হয়েছেন বলে এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
গত ১৭ মার্চ রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে শহরের মুড়িব সড়কের জয়তী সোসাইটির পেছনে নিজ বাড়িতে সশস্ত্র হামলার শিকার হন সাদী। শহর থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ির সামনে আসার পরই পেছন থেকে তাকে চাকু দিয়ে আঘাত করা হয় এবং পরে গুলি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
হত্যাকান্ডের পরই পুলিশের একাধিক সংস্থা—পিবিআই, ডিবি ও থানা পুলিশের পৃথক টিম তদন্তে নামে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, স্থানীয় মেহেদী ও ট্যাটু সুমন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। সাদীর কাছে তারা চাঁদা দাবি করেছিল, যা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
তবে স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রেল বাজার ও মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হয়। যার নিয়ন্ত্রণকারী ছিলেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী মেনসেল। তার অন্যতম সহযোগী ও চাঁদা আদায়ের ম্যানেজার ছিলেন সাদী। গত ২০১৪ সাল থেকে চাদা আদায় চলে আসছিল। মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা তোলার এই প্রক্রিয়ায় হিস্যা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুবলীগ ঘরানার নেতাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয় এবং দুটি বলয়ের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতির আরও পরিবর্তন ঘটে, যা বিরোধকে আরও গভীর করে তোলে।
সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঘটনার রাতে মেহেদী ও ট্যাটু সুমন সাদীর বাড়ির দিকে প্রবেশ করছে। এরপরই গুলির শব্দ ও চিৎকার শোনা যায়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এলাকায় আধিপত্য ও রেলবাজার ও মুজিব সড়কের দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের দখলকে কেন্দ্র করে সাদী হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুল হক ভুঁইয়া এবং কোতোয়ালি থানার ওসি কাজী বাবুল হোসেন জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে পৃথক টিম কাজ করছে এবং ওই এলাকায় অতিরিক্ত টহল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এমএম